৫০টি শিক্ষা, যা আপনার সন্তানকে অবশ্যই শেখানো উচিৎ

৫০টি শিক্ষা, যা আপনার সন্তানকে অবশ্যই শেখানো উচিৎ

নিখুঁত জীবন যাপনের জন্য যেমন এককভাবে নিখুঁত কোনো পদ্ধতি নেই, প্যারেন্টিংয়ের ক্ষেত্রেও তেমনি নিখুঁত কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু একটু সচেতনতা এবং একটু গভীর চিন্তার ফলে আমরা নিজেদেরকে এবং আমাদের সন্তানদেরকে জীবনের কয়েকটি সন্তোষজনক পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত করাতে পারি।

১. তুমিই তোমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি, ভবিষ্যতেও তুমিই তোমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি হয়ে থাকবে।

২. তুমি আশপাশের সকলের প্রিয় মানুষ হয়ে উঠবে কখনও এমনটি ভেবো না। এমনটি কখনোই ঘটে না।

৩. স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যত্নবান হও কারণ, দেহ একটাই। এই দেহ একবার ভেঙ্গে পড়লে তা অবিকল পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয় না।

৪. সুযোগ পেলেই নিজের ভালো লাগা কোনো প্রিয় সঙ্গীত উপভোগ করতে শেখো। একান্তে শোনা কোনো প্রিয় সঙ্গীত মনকে একীভূত করে জীবনের ছন্দ বুঝতে সহায়তা করে।

৫. প্রতিদিন নিজেকে বলো: আমি শৃঙ্খল, আমি শক্তিশালী, আমি স্রষ্টার প্রিয়, আমি নিরাপদ। আমার মনে যা আসে এমন সবকিছু আমি চাইলেই অর্জন করতে পারি। আমি বিজয়ী । (মানুষকে তো এক অর্থে সৃষ্টিই করা হয়েছে শয়তানের বিপক্ষে বিজয় অর্জনের জন্য)।

৬. প্রতিদিন ২০ মিনিট করে দুইবার মেডিটেশন মনকে বিক্ষিপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে। (মেডিটেশনের চেয়ে দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে মুসলিমগণ নি:সন্দেহে সর্বোত্তম বিবেচনা করতে পারি)।

৭. কার সঙ্গে গোপন বিষয় শেয়ার করছো তা ভালোভাবে ভেবে নাও। বিশ্বাসযোগ্য কাউকেই না পেলে গোপন বিষয় নিজের কাছেই গোপন রাখো।

৮. সবকিছুতেই সরল জীবন চর্চা করো (‘Keep things simple’)।

৯. যে তোমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ তাকে কখনোই ছেড়ে যেও না। সুযোগ এবং অবস্থা পরিবর্তন হয়। প্রতিদিনই অলৌকিক কিছু ঘটে।

১০. কেউ তোমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়ালে সাহায্য নিতে কুন্ঠাবোধ করো না। একা একা কেউ অনেক দূর যেতে পারে না।

১১. দু:সময়ে উপকার পেয়েছো এমন কাউকে ভুলে যেও না।

১২. খুঁতখুঁতে আর জটিল বাক্যবানে লিপ্ত হয়ো না। সবকিছুতেই সারল্যই সর্বোত্তম।

১৩. কাউকে আশাহত করো না। হতে পারে ওই আশাই ছিল তার শেষ সম্বল। এই কথাটা তোমার নিজের ক্ষেত্রেই বিচার করে দেখো: শেষ আশা পূরণ হয়ে যাওয়ার পর আর কী বাকী থাকে বলো? কিন্তু শেষ আশা পূরণ না হলে যে বেদনার ভার তা কারো কারো পক্ষে হয়তো বহন করা অসম্ভব হয়ে ওঠে।

১৪. তুমি হয়তো বেঁচে থাকবে উন্নত প্রযুক্তি, রোবট আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে। মনে রাখো, এই প্রযুক্তির যুগে তোমার কাজে সাহায্যের জন্য হয়তো তুমি নিজেকে ছাড়া আর কাউকে পাবে না।

১৫. যদি তুমি কখনো কোনো কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হও কিন্তু কোনো সমাধান খুঁজে না পাও, একই সময়ে যদি নিজেকে এবং তোমার পরিবারকে রক্ষার প্রশ্ন দেখা দেয়, এমতাবস্থায় বিচলিত হয়ো না। সাহসী পদক্ষেপ নাও।

১৬. এমনভাবে জীবন যাপন করো যেনো লোকে বলতে বাধ্য হয়, ‘কমরেড, তুমি তোমার সর্বোচ্চটাই দিয়েছো, আমরা কৃতজ্ঞ।’

১৭. যদি কেউ তোমাকে আলিঙ্গনের জন্য এগিয়ে আসে, তবে তাড়াহুড়ো করে তাকে আগেই ছেড়ে দিও না। আন্তরিক হও।

১৮. রোমান্টিক এবং চিরায়ত চিন্তা ধারণ করো, এমনকি যদি লোকে তা হাস্যকর মনে করে তবুও।

১৯. কাউকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দিতে পারো, তৃতীয়বার নয়।

২০. বিনম্র হও, চিন্তাগ্রস্ত হয়ো না। আমাদের পূর্বপুরুষেরা অনেক বড় বড় অর্জন করেছেন, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও অনেক বড় বড় অর্জন করবে। জীবন আসলে ইতিহাসেরই চক্র। জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তা অর্থহীন।

২১. কাউকে হয়তো পছন্দ করতে পারো, মনের কথা শেয়ারও করতে পারো, কিন্তু গভীরভাবে ভালোবাসতে যেও না। ভালোবাসা কখনও কখনও আনন্দের কারণ হয়, কখনও কখনও বেদনার।

২২. আগের প্রজ্ঞাটি আরেকবার বলতে চাই। কাউকে পছন্দ করতে পারো, কিন্তু গভীরভাবে ভালোবাসতে যেও না।

২৩. প্রিয়জন যখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকে তখন হাসপাতালে তাদেরকে দেখতে যাও। হয়তো তুমি সেখানে কয়েক মিনিট অবস্থান করবে, কিন্তু এই কয়েক মিনিটই প্রিয়জনকে এই বার্তা দেবে যে, সে একা নয়, নিকটজনরা তার কাছেই আছে।

২৪. নির্ভীক এবং সাহসী হও। যদি না হতে পারো, তবে নির্ভীক এবং সাহসী হওয়ার অভিনয় করো। সত্যি বলতে কি, আমি সারাজীবন এই অভিনয়টা করে এসেছি, কিন্তু কেউ বুঝতে পারেনি।

২৫. গোপনে মানুষের উপকার করাকে অভ্যাসে পরিণত করো। এমনভাবে গোপনীয়তা রক্ষা করে চলো যে, কেউ যেনো বুঝতেই না পারে কে তাকে সাহায্য করছে।

২৬. তোমার ভালো লাগা একটা বইয়ের খবর অন্যদেরকে বলো। হতে পারে, সেই বই থেকে অন্যরাও উপকৃত হবে। (কুরআন কিংবা হাদীস পড়ে প্রচার করাও মুসলিমদের কর্তব্য)।

২৭. কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হলেও ইতিবাচক চিন্তা লালন করো। অক্সিজেন যেমন ফুঁসফুঁসকে বাঁচিয়ে রাখে, চিন্তাও তেমন আমাদের বাস্তবতাকে প্রভাবিত করে।

২৮. যখনই শিশুদের সংস্পর্শে যাও, শিশুদেরকে সাহসী হতে শেখাও।

২৯. নিজের মানসিক অবস্থাকে দৃঢ় হিসেবে গড়ে তোলো। বিনম্র এবং সহানুভূতিশীল হও কিন্তু অন্যদেরকে তোমার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে দিও না।

৩০. যদি দেখো খেলায় হেরে যাচ্ছো, তখনও ভালোভাবে খেলা চালিয়ে যাও।

৩১. যদি দেখো খেলায় জিতে যাচ্ছো, তখনও ভালোভাবে খেলা চালিয়ে যাও।

৩২. ঘুমাতে যাওয়ার সময় রাতে নিজের কাছে সবসময় একটি নোটবুক এবং একটি কলম রাখো, কারণ, জীবন পরিবর্তনকারী আইডিয়াগুলো অনেক সময় গভীর রাতে উদয় হয়।

৩৩. আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে এমন সবাইকে শ্রদ্ধা জানাতে ভুল করো না। তা সে কাজটা যতই ছোট হোক না কেনো।

৩৪. পেছনে ফেরার রাস্তা বন্ধ করে দিও না। জীবনে কখনও কখনও আবার পেছন থেকে শুরু করতে হয়।

৩৫. যাদের হারানোর কিছু নেই এমন মানুষ থেকে সবসময় সাবধান থেকো।

৩৬. কেউ যদি খাবারের দাওয়াত দেয়, মন থেকে দাওয়াত গ্রহণ না করলেও হৃদয় থেকে তাকে ধন্যবাদ দিতে ভুলে যেও না। হৃদয় থেকে কারো ডাকে সাড়া দেওয়ার প্রভাব অতি গভীর।

৩৭. জীবনের সহজ পথের বদলে দীর্ঘ পথকেই বেছে নাও। জীবনের সত্যিকারের প্রাপ্তিগুলো দীর্ঘ পথেই আসে।

৩৮. বস্তু নয় অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করো, কারণ বস্তুর চেয়ে অভিজ্ঞতা মূল্যবান। (এই প্রজ্ঞাটি কারেন স্যালমনশনের উক্তি হিসেবেও অনলাইনে পাওয়া যায়!)

৩৯. জীবনে সঠিকভাবে চিন্তাভাবনা করে কিছু ঝুঁকি নাও। কারণ, জীবনে তুমি কি কি ভুল করেছো এই জন্য যতটা না অনুতপ্ত হবে তার চেয়ে জীবনে ঝুঁকি না নেওয়ার জন্য হয়তো অনেক বেশি অনুতপ্ত হবে।

৪০. যখনই কাউকে ‘ভালোবাসি’ বলার সুযোগ পাবে, বলে ফেলো।

৪১. নিজেকে কখনো অন্যের সঙ্গে তুলনা করো না। অন্য কারো মতো হতে হওয়ার চেষ্টা করো না। কারণ, প্রত্যেকেরই স্বতন্ত্র জীবন যাপন করা উচিৎ।

৪২. পৃথিবীর প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর হলো: ভালোবাসা, বিনয় এবং শুকরিয়া।

৪৩. সব সময় মনে রাখবে, তোমার চাকুরীর দক্ষতার চেয়ে মানুষকে তুমি কতটা গুরুত্ব দিয়েছো অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার উপরই নির্ভর করবে তোমার সাফল্য। মানুষকে মূল্যায়নের গুরুত্ব যে বুঝবে তার আর টাকার সমস্যা হবে না।

৪৪. কাছের মানুষকে দেওয়া কোনো ক্ষুদ্র দানও কখনো কখনো অনেক বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকে।

৪৫. কারো জন্য একটা ভিন্ন কিছু করো।

৪৬. যদি ‘না’ বলতে চাও, তবে কখনোই ‘হ্যাঁ’ বলতে যেও না। (‘Never say yes if you want to say no.’)

৪৭. যাদের সঙ্গ তোমাকে অধিক প্রশান্তি দেয় তাদের সঙ্গেই অধিক সময় ব্যয় করো।

৪৮. জীবন ফুল সজ্জা নয়। এই ভাবনা হৃদয়ের যত বেশি গভীরে ধারণ করবে, জীবন ততই সহজ হয়ে উঠবে।

৪৯. জীবনের কিছু কিছু ব্যর্থতা জীবনের অনেক সাফল্যের চেয়েও মূল্যবান।

৫০. মরিনো জুগারো তার লেখায় পঞ্চাশ নম্বর প্রজ্ঞাটি জন্য চোখ-কান খোলা রেখে খুঁজতে বলেছেন। মানে, জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়ার প্রতি জোর দিয়েছেন।

সন্তানের মাঝে এই ৫০টি প্রজ্ঞা প্রয়োগ করতে চাইলে, আগে নিজের উপর এই প্রজ্ঞাগুলো প্রয়োগ করতে হবে।

রবার্ট ফুলঘামের একটা মূল্যবান উক্তি মনে করা যাক:

“আপনার সন্তান আপনার কথা শুনছে না বলে দুশ্চিন্তা করবেন না। বরং দুশ্চিন্তা করুন এই ভেবে যে, আপনার সন্তান আপনাকে অনুসরণ করছে।”

*মরিনো জুগারো’র এই লেখাটি মিডিয়াম ডট কমে প্রকাশিত। ভাবানুবাদ করে কিছুটা পরিমার্জন করে এখানে প্রকাশ করা হলো।

অনুবাদ : মিজান রহমান

 

Leave a Reply