শিশুকে যেভাবে পড়াশুনায় আগ্রহী করে তুলবেন

শিশুকে যেভাবে পড়াশুনায় আগ্রহী করে তুলবেন

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আগে শিশুকে বাড়িতে পড়ানো হয়,অনেকে এটাকে সহজ মনে করলেও এটা আসলে অনেক জটিল বিষয়।অনেক অভিভাবক শিশু পড়তে না চাইলে মারধর করে কিন্তু না, এটা কোনো সমাধান নয় ।আপনার সন্তান কিসে আনন্দ পায় এবং কিসে বিরক্ত হয় একমাত্র আপনি তা ভালো করে বলতে পারবেন। আপনার সন্তানকে পড়াতে এমন কিছু কৌশল অবলম্বন করুন যাতে সে আনন্দে শিখতে পারে। আজকে আমরা এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

খেলতে খেলতে পড়াবেন

শিশুদের বিনোদনের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো খেলা।এমন কোনো শিশু নাই যে খেলতে পছন্দ করেনা। তাই শিশুর ওপর এমন কোনো চাপ প্রয়োগ করবেন না যাতে শিশুর খেলার প্রতি অনীহা চলে আসে। শিশুর খেলার প্রতি আগ্রহের ফলে আপনি নিজেও লাভবান হবেন কারণ শিশুরা খেলার ছলে সবকিছু করতে ভালোবাসেন।তাদেরকে খেলার ছলে কৌশলে পড়াতে হবে।খেলার মাধ্যমে কোন বিষয়ে বাস্তব জ্ঞান দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে। একটা সময় সে পড়াশোনাকে তার খেলার মতই মজার বিষয় মনে করবে এবং নিজের আগ্রহে পড়তে থাকবে। তাই কখনো শিশুকে মানসিক চাপ না দিয়ে খেলাচ্ছলে মুখে মুখে পড়াবেন।

শিশুর জন্য এমন কিছু খেলা নির্বাচন করুন যার দ্বারা সে কিছু শিখতে পারে। যেমন আপনি যদি আপনার সন্তানকে বিভিন্ন রংয়ের খেলনা কিনে দেন এবং খেলার ছলে বলে দেন কোনটা কোন রং তাহলে সে সহজেই সেই রংগুলোর নাম শিখে যাবে।

যেমন খুশি আঁকতে দিন

আপনার শিশুকে যা খুশি আঁকতে দিন।একটি শিশুর জন্য পেন্সিল ধরতে পারাটাও শেখার বিষয় তাই তাদের যেমন খুশি আঁকতে দেওয়া উচিত। এই আঁকার মাধ্যমে তাকে সহজ বর্ণগুলো লিখতে সাহায্য করুন। কোন অবস্থাতেই ধারাবাহিকভাবে সরাসরি অ,আ,ই,ঈ বা ক, খ ,গ নয়। যেমন সোজা দাগের মাধ্যমে শিশুকে প্রথমে ” া” (আকার) শেখাতে পারেন। দাগের মাধ্যমে ত্রিভুজ আঁকা শিখিয়ে ব,র,ক লেখাতে পারেন।পর্যায়ক্রমে বাবা,কাকা ইত্যাদি শিশুকে বানান করে শেখাতে বা লিখাতে পারেন। এভাবে আঁকার মাধ্যমে তাকে বিভিন্ন বর্ণ ও শব্দ শেখাতে পারেন।তাই শিশুকে জোর করে লেখার প্রবনতা বন্ধ করুন।মনে রাখতে হবে যে শিশু তার আশেপাশের যত বেশি জিনিস সম্পর্কে জানবে সেই শিশু তত বেশি জ্ঞান অর্জন করবে।

গান,ছড়া ও গল্প শেখান

বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ।প্রযুক্তির এই যুগে শিশুদের জন্য বিভিন্ন রকম ছড়া,কার্টুন,গল্প, তৈরি করা হচ্ছে।শিশুরা সাধারণত প্রযুক্তির মাধ্যমে শিখতে ভালবাসে। একটি শিশুকে যখন গানের সুরে অথবা কার্টুন এর মাধ্যমে কিছু শিখাবেন তখন সে তা মনোযোগ দিয়ে দেখবে কারণ শিশুদের পছন্দ অনুযায়ী নানা কৌশলে কার্টুনগুলো তৈরি করা হয়।এতে শিশুরা সহজে শিখে।

অংক ও জটিল বিষয়গুলো উদাহরণ দিয়ে বুঝান

বেশিরভাগ শিশু অংককে ভয় পায়।আপনি এই ভয়কে কৌশলে নিমিষেই দূর করতে পারেন।অর্থাৎ একটি শিশুকে আপনি যদি ট্যাকনিকালি কিছু শেখান তাহলে সে সেটা দ্রুত মনে রাখতে পারবে।তাই এক্ষেত্রে আপনি শিশুকে যদি আশেপাশের বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে অংক শেখাতে পারেন তাহলে সে দ্রুত শিখবে।ধরুন তার খেলনার সংখ্যা কত, তার থেকে কিছু সংখ্যক বাদ দিলে বাকি কতটুকু থাকবে অথবা যোগ করলে কতটা হয়।এভাবে কৌশলের মাধ্যমে অংক শিখিয়ে নিন।তাছাড়া বড় ক্লাসের অংকগুলো উদাহরণ দিয়ে শিখিয়ে দিন।

প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পড়তে বসান

অনেকেই বুঝতে পারেন না যে কিভাবে শিশুকে পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তোলা যায়।এর জন্য প্রথমত আপনাকে একটি অভ্যাস তৈরি করাতে হবে।যেমন আমরা যদি একটা কাজ নিয়মিত করি তখন তা আমাদের অভ্যাসে পরিনত হয় এবং প্রতিদিন অলসতা ছাড়া সেটা করতে পারি। ঠিক তেমনি আপনার সন্তানকে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে পড়াতে বসান।তাকে এমনভাবে পড়াবেন না যাতে তার পড়ার প্রতি অনিহা সৃষ্টি হয়। নিয়মিত পড়ার ফলে শিশুর পড়ার প্রতি আগ্রহ ও ভালবাসা সৃষ্টি হয়।শিশুকে কখনো জোর করে বা ধমক দিয়ে পড়ানোর চেষ্টা করাবেন না কারণ এভাবে পড়ালে শিশুর পড়ার প্রতি বিরক্ত সৃষ্টি হয়।তাই তাদেরকে কৌশলে পড়াতে হবে যাতে তারা পড়াশুনাকে এড়িয়ে না যায় বরং আগ্রহ নিয়ে পড়তে বসে।

মজার ছলে পড়াবেন

অনেক বাবা মা তাদের শিশুকে পুরস্কার দেয়ার লোভ দেখিয়ে পড়া মুখস্ত করিয়ে নেন।এটার উপকারিতা থাকলেও অপকারিতাও রয়েছে।এর মাধ্যমে শিশুর মনে একধরণের লোভ সৃষ্টি হয়। তাই সে কোনরকম আগ্রহ ছাড়াই শুধু পুরস্কারের লোভে পড়া শিখে।তাই শিশুদের কোন লোভ দেখিয়ে নয় বরং মজার ছলে পড়ানোর চেষ্টা করবেন।যেমন কোন গল্পের মাধ্যমে শিক্ষনীয় বিষয়টি ফুটিয়ে তুলুন, অথবা ছবি দেখিয়ে কোন স্থানের নাম শেখাতে পারেন।এভাবে মজার ছলে পড়ালে তারা পড়ার প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে।

উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করুন

শিশুর লেখা পড়ার আগ্রহের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।শিশুরা সাধারণত অনুকরণ প্রিয়।তাই তারা তাদের আশেপাশের অনেক কিছু দেখে শিখে থাকে। শিশুর বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করতে হবে বাবা-মাকেই।অনেক সময় শিশুকে পাশে পড়তে দিয়ে বাবা মা টিভি দেখে,এটা শিশুকে পড়াশুনার প্রতি অনাগ্রহী করে তোলে। শিশুর পড়ার সময় তার পাশেই থাকুন।শিশুকে একটি পড়ার টেবিল বানিয়ে দিন এবং টেবিলটিকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখুন।পড়ার উপযুক্ত পরিবেশ পেলে শিশুরা সহজেই নিজেরাই শিখতে পারে।

সৌজন্যে : রিপন বারী

Leave a Reply