আসিফ সিবগাত ভূঞা : জীবন মনেই যেন ছকে বাঁধা এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতা। সেখানে জয়ী হতে সবাই ছুটে চলেছে। কারো পিছনে তাকানোর সময় নেই। যে যেভাবে পারছি সফলতা নামক সোনার চাবিটির পিছে ছুটেই চলেছি। ফলে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক সব ক্ষেত্রে এর বৈরি প্রভাব পরছে। এতে সমাজে দেখা দিচ্ছে অসমতা, বিশৃঙ্খলা। তাই সন্তানকে মানবিক আদর্শবান কিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রতিটি বাবা-মার স্যোশাল প্যারেন্টিং খুব জরুরি। তাই জেনে নিই, কিভাবে করবেন স্যোশাল প্যারেন্টিং?
প্রতিযোগিতার মানসিকতা পরিহার : শিশুকে প্রতিযোগী করার মানসিকতা তৈরির চেষ্টা করবেন না বা সেরকম উৎসাহ দেয়া উচিত না। পরীক্ষায় ভালো করার চেয়ে তাকে শেখার ব্যাপারে উৎসাহী করুন। ভালো বই পড়তে উৎসাহী করুন। এক সাথে তার সাথে ভালো বই পড়ুন, ডিসকাস করুন।
ক্লাসমেটদের সাথে ভালো ভালো আলোচনা করতে তাকে তাগিদ দিন। স্কুল শেষে ঘরে ফিরে আসলে তাকে জিজ্ঞেস করুন সে কী নিয়ে তার শিক্ষক ও বন্ধুদের সাথে আলোচনা করলো এবং কী জানলো।
পরীক্ষার রেজাল্টে ন্যূনতম গুরুত্ব দিন। ভালো করলে অভিনন্দন জানান। খারাপ হলে পরেরবার ভালো হবে বলে উৎসাহ দিন। এর বেশি এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কিছু নেই।
মানবিক দিক শেয়ার : আপনার শিশুকে শিক্ষা বা খেলার প্রতিযোগিতায় জেতার জন্য বেশি তাগিদ দেয় ঠিক নয়। শিশুকে নিয়ে গর্ব করা যেন এসবে আটকে না থাকে। আপনার শিশু যদি তার টিফিন বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে সেটাতে বেশি গুরুত্ব দিন। পারলে তাকে বেশি করে টিফিন দিন যাতে সে অন্যদের দিতে পারে।
তার পাওয়া সার্টিফিকেট বা মেডেলগুলো সোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করার চেয়ে তার মানবিক দিকগুলো শেয়ার করুন। আপনার বাচ্চাকে আপনার সব আচরণ দিয়ে বুঝতে শেখান যে কম্পিটিশন জেতার মধ্যে এমন কিছু বাহাদুরি নেই বা কৃতিত্ব নেই। নিজে জিতে গিয়ে অন্যকে হারিয়ে দেয়ার মধ্যে জীবন নেই। জীবন আছে সবাই একসাথে উঠে আসার মধ্যে। যে উঠে আসতে পারছে না তাকে সাহায্য করার মধ্যে।
অন্য শিশুদের চেয়ে আলাদা করবেন না : আপনার শিশুর মাঝে নিজেকে স্পেশাল হওয়ার মনোভাব তৈরি করে দেবেন না। অন্য শিশুদের চেয়ে আলাদা তাকে হওয়ার দরকার নেই। সেরকম ইচ্ছাও আপনার থাকা উচিৎ না। যদি তার মাঝে আল্লাহ্ কোনো স্পেশাল গুণ দিয়েই দেন সেটা সে নিজে থেকেই ম্যানিফেস্ট করবে। আপনি তাকে সাধারণ মানুষ হতে শেখান। সে যেন অন্যদের চেয়ে নিজেকে বেশি স্মার্ট, বেশি গিফটেড মনে না করে।
পড়াশোনায় ভালো না করলে রিকশা চালাতে হবে এসব বলবেন না। রিকশা চালানো খারাপ কিছু নয়, তার মাঝে এরকম চিন্তাও আনতে দেবেন না। বরং তাকে পৃথিবীর মানুষের কষ্টগুলো বোঝান। মানুষ কত কষ্টের মাঝে থাকে, কত মানুষ যে আপনার শিশুর মতো সুবিধা পায় না সেই কৃতজ্ঞতা তার মধ্যে নিয়ে আসুন। তাকে মানবিক হতে সহায়তা করুন। আপনার সন্তানের রিকশা চালানোর সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু আপনার এসব কথার জন্য বড় হয়ে সে রিকশাওয়ালাদের তাচ্ছিল্যের চোখে দেখবে। সেটা হবে আপনার সন্তানের সবচেয়ে বড় পরাজয়। এর চেয়ে তার রিকশা চালানোই ভালো ছিল।
সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল


